যাকাত নিয়ে যত কথা

আমাদের ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে যাকাত অন্যতম একটি স্তম্ভ। যাকাতের আভিধানিক অর্থ পরিশুদ্ধ হওয়া,বৃদ্ধি পাওয়া। আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল-কোরআনে "যাকাত" শব্দের উল্লেখ এসেছে ৩২ বার। নামাজের পরে সবচেয়ে বেশি বার এটি উল্লেখ করা হয়েছে।  এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, দৈহিক ইবাদত হিসেবে নামাজ যেমন খুবই গুরুত্বপূর্ণ,তেমনি আর্থিক ইবাদত হিসেবে যাকাতও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ধনী-গরীবের ব্যবধানঃ যাকাত ধনী ও গরীবের মধ্যে একটা ভারসাম্য আনে। যাকাত হলো ধনীর সম্পদের মধ্যে গরীবের হক। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর তাদের সম্পদে গরীব ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে”। (সূরা আল-যারিআত, আয়াত:১৯)। কাজেই যাকাত আদায় না করার অর্থ হল, গরীবকে তার প্রাপ্য হক থেকে বঞ্চিত করা।

যাকাত যাঁদের ওপর ফরজঃ নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক সকল মুসলিম নর-নারীর উপর যাকাত প্রদান ফরয করা হয়েছে।  অর্থাৎ সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ, (আবু দাউদঃ ১৫৭৩, শায়খ ইবনে উষাইমিন, আল-মুমতিঃ ৬/১০৩) বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা,কিংবা সমপরিমাণ মূল্যের নগদ টাকা বা ব্যবসার মালের মালিক যে তার উপর যাকাত ফরজ হবে (সহীহ বুখারীঃ ১৪৫৯, সহীহ মুসলিমঃ ৯৭৯, শায়খ ইবনে উষাইমিন)। “কোন ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার পর চাঁদের হিসাবে পরিপূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হলে তার উপর পূর্ববর্তী বছরের যাকাত প্রদান করা ফরয। অবশ্য যদি কোন ব্যক্তি যাকাতের নিসাবের মালিক হওয়ার পাশাপাশি ঋণগ্রস্ত হয়, তবে ঋণ বাদ দিয়ে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার উপর যাকাত ফরয হবে।“ (তিরমিযী হা/৬৩১, মিশকাত হা/১৭৮৭)। যাকাত ফরজ হওয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো দরিদ্রকে সহযোগিতা এবং তার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা। যাবে। তাই যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সম্পদ বর্ধনশীল হওয়া অপরিহার্য। 

যারা অগ্রাধিকার পাবেনঃ যাকাত কাদের দিবেন তাও উল্লেখ করে বলা হয়েছে। পবিত্র কুরআনের সূরা আত-তাওবায় যাকাত বন্টনের আটটি খাত আল্লাহ তায়ালা নির্ধারন করেছেন। যাদের যাকাত দেয়া যাবে তারা হলো—(১) ফকির, (২) মিসকিন, (৩) যাকাতকর্মী (৫) কৃতদাস, (৬) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, (৭) আল্লাহর পথে জিহাদ ও (৮) বিপদগ্রস্ত বিদেশি মুসাফিরের জন্য। এটি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। (সুরা তওবা, আয়াত ৬০)।  

অনেকে যাকাতের অর্থ দিয়ে শাড়ি ক্রয় করে তা গরীবদের মধ্যে বন্টন করে থাকেন। এভাবেও যাকাত আদায় হয়ে গেলেও আসলে প্রকৃতপক্ষে যাকাত গ্রহণকারীর তেমন উপকার হয় না। তাই যাকাত বন্টনের উত্তম পন্থা হলো: যাকাত যাদেরকে প্রদান করা যায়, তাদের একজনকেই বা একটি পরিবারকেই যাকাতের সম্পূর্ণ অর্থ দিয়ে স্বাবলম্বী করে দেয়া।

 

যাকাত আদায় না করার ভয়াবহ পরিণামঃ 

যাকাত না দেয়ার পরকালীন শাস্তি অত্যন্ত ভয়ংকর। যাকাত আদায়ের ব্যাপারে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে কুরআনে আল্লাহ পাক বলেছেনঃ "যারা সোনা রূপা পুন্জিভূত করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে খরচ করে না, তাদের যন্ত্রাণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। এমন একদিন আসবে, যেদিন সেসব সোনা-রূপা জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে, তারপর তা দিয়ে তাদের মুখমন্ডল, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেওয়া হবে এবং বলা হবে, এই হলো তোমাদের সেসব অর্থ সম্পদ যা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। অতএব এখন নিজেদের জমা করে রাখা সম্পদের স্বাদ গ্রহণ করো।" (সূরা তওবাঃ ৩৪-৩৫)। এ আয়াতে যাকাত আদায় না করার ভয়ংকর পরিণতির বর্ণনা উঠে এসেছে।

যাকাত আদায় না করার ভয়াবহতা অনেক, তাই আসুন আমরা সঠিক ভাবে যাকাত আদায় করি এবং নিজেদের সম্পদকে পবিত্র করার মাধ্যমে ইহকালীন দুর্ভোগ ও পরকালীন ভয়াবহ শাস্তি থেকে নিজেদের রক্ষা করি।